প্রচ্ছদ হেড লাইন: শ্বশুর বাড়ির ইফতারি নামক সামাজিক এই ব্যাধিকে না বলে অসহায়দের মুক্ত করি

শ্বশুর বাড়ির ইফতারি নামক সামাজিক এই ব্যাধিকে না বলে অসহায়দের মুক্ত করি

আসুন যুগযুগ ধরে চলে আসা শ্বশুরবাড়ির ইফতারি ও আম-কাঁঠলি নামক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরী করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোকে শান্তিতে থাকতে দেই। সবাই মিলে যার যার অবস্থান থেকে এই নৈতিক দায়িত্ব পালন করলে সময়ের ব্যবধানে এই কুসংস্কার একদিন দূর হয়ে যাবে।

ইফতারি ও আম-কাঁঠলি সমাজে প্রচলিত অপসংস্কৃতির কয়েকটির মধ্যে অন্যতম। তাও আবার এইগুলো অনেক ব্যয় বহুল।  দেশের প্রায় প্রত্যেক জায়গায়ও আহামরি রোগের মত দেখা দিয়েছে এই দুটি অপসংস্কৃতি। প্রচলিত এই দু’টি অপসংস্কৃতি প্রভাবশালী পরিবারের জন্য খুব একটা চিন্তার বিষয় নয়। বরং অনেক পরিবার এই অপসংস্কৃতিতে আনন্দ পায়। কিন্তু গরীব, অসহায় পরিবারের কর্তাদের জন্য পবিত্র মাহে রমজান এবং জ্যৈষ্ঠ মাস এক অসহনীয় সময় যা ধনী, বিত্তশালীরা কোনভাবে বুঝেন না।

সিয়াম সাধনার এই মাসে যেখানে ইবাদতে মশগুল থাকার কথা সেখানে অসহায় বাবারা চিন্তায় থাকেন কেমন করে ইফতারি দেবে মেয়ের বাড়িতে! না হয় সম্মান যাবে, মেয়ের শ্বশুর বাড়ির মানুষ কি বলবে? অপর দিকে ধনী, বিত্তশালী বাবারা বিদেশ থেকে টাকা এনে ধুমধাম করে প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা খরছ করে মেয়ের সম্মান বাড়ানোর জন্য ইফতারি, আম-কাঠলি দিয়ে থাকেন অথচ এই অপসংস্কৃতির কারণে অনেক বাবার জন্য বুকফাটা দুঃখ আর কষ্ট হয় তা কেউ কি জানেন!

একমাত্র ভুক্তভোগী পরিবার জানে এই কুসংস্কারের বলি হয়ে তারা কতটা জর্জরিত। জন্মের পর থেকে একটা মেয়ে পরিপূর্ণভাবে তার পরিবারের উপর নির্ভরশীল। বিয়ের আগ পর্যন্ত তার যাবতীয় খরচ তার পরিবারই বহন করে তাকে। ভরণ পোষণ করে কোনরূপ প্রতিদান না নিয়েই একজন বাবা তার মেয়েকে পাত্রস্থ করে। সাধ্য অনুযায়ী বরপক্ষের এসব আবদার মিটিয়ে দিয়েই বিয়ে হয়ে যায়। তাহলে কি বিয়ে হয়ে গেলেই মেয়েপক্ষ স্বস্তির নিঃস্বাস নিতে পারছে? মোটেই নাহ!

বরং বিয়ের প্রাথমিক ধাপ শেষ করে স্বজ্ঞানে বাকি জীবন সিজনভিত্তিক অবিচার মেয়েপক্ষকে সহ্য করে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আর সেই বন্দোবস্ত অনুযায়ী আপনাকে চলতেই হবে। আপনার বিভিন্ন উপঢৌকন নির্ভর করবে আপনার মেয়ে সুখে থাকার অবস্থা। মেয়ের সুখের জন্য মেয়ের অভিভাবকরা দিনের পর দিন শশুর বাড়ির এইসব জুলুম নীরবে সহ্য করেই যায় আর যাচ্ছেই এখনকার আধুনিক সমাজেও।

এইসব ইফতারি কয়টা পরিবার স্বানন্দে তার মেয়ের বাড়ি দিয়ে থাকে, হাতেগুনা কয়েকটা পরিবার পরে শুধুমাত্র মেয়ের/বোনের মুখ রক্ষার্থে সামাজিক এই কুপ্রথার ভার অনেক পরিবার অনায়েশে বয়ে যাচ্ছে। কোনরূপ আনন্দ ছাড়াই মেয়েপক্ষ বলিদান হয়ে যাচ্ছে। সবচাইতে বেশী নির্মমতার স্বীকার সমাজের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবার। দরিদ্র পরিবার মেয়ের সুখের জন্য সুদে টাকা এনে হলেও মেয়ের বাড়ি ইফতারি দিতে বাধ্য হয়। শ্বশুরবাড়ি যখন ইফতারি খাওয়া আর বিতরণে ব্যস্ত, হয়তো সেই রাতে একটা মেয়ের বাবা চোখেরজলে বালিশ ভিজাচ্ছে। কিভাবে সে টাকা পরিশোধ করবে। সেই টাকার চিন্তা শেষ হতে না হতেই দেখা যায় আরেকটা আম-কাঠালী দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। উফফফ, কি নির্মমতা!

এতে সম্পর্ক ভালো হচ্ছে না। বরং এই দেওয়ার অন্তরালে লুকিয়ে থাকে হাজার হাজার অশ্রু আর মেয়ের জামাই বাড়ির প্রতি নীরব ঘৃণার জন্মাচ্ছে। যা মুখ ফুটে বলা হচ্ছে না। 

তাই আসুন যুগযুগ ধরে চলে আসা শ্বশুরবাড়ির ইফতারি ও আম-কাঁঠলি নামক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরী করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোকে শান্তিতে থাকতে দেই। সবাই মিলে যার যার অবস্থান থেকে এই নৈতিক দায়িত্ব পালন করলে সময়ের ব্যবধানে এই কুসংস্কার এক দিন দূর হয়ে যাবে।