প্রচ্ছদ জাতীয় শাহপরাণ মাজারে সিজদা ও অসামাজিক কাজ থেকে বিরত থাকতে কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড

শাহপরাণ মাজারে সিজদা ও অসামাজিক কাজ থেকে বিরত থাকতে কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড

৫ আগস্টের পর সবকিছুতেই লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। সিলেটে শাহজালাল ও শাহপরাণ রাহ.-এর মাজারেও শিরক এবং অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে সোচ্চার হন স্থানীয় আলেম-সমাজ। গঠন করেন ‘হযরত শাহজালাল রাহ. তাওহিদি কাফেলা’ নামের অরাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠন এবং সিলেটের আলেম-সমাজের জোর দাবিতে এবার শাহপরাণ মাজার কর্তৃপক্ষ আগত ভক্তদের সেজদা প্রদান ও মাদকদ্রব্য সেবনসহ সকল অসামাজিক কাজ থেকে বিরত রাখতে সম্প্রতি সাইনবোর্ড টানিয়েছে।

দেখা যায়, শাহপরাণ মাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি বেশ কিছু সাইনবোর্ড টানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসবে ‘মাজারে সেজদা করবেন না’, ‘মাাজারে সকল প্রকার শরিয়তবিরোধী ও অনৈতিক-অসামাজিক কার্যকলাপ বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো’, ‘মাজারের পবিত্রতা রক্ষা করুন’, ‘মাজারে গাঁজা-সিদ্ধিসহ মাদক সেবন ও অশ্লীল গান-বাজনা নিষেধ’ ইত্যাদি নির্দেশনা দেওয়া।

শাহপরাণ মাজারের অন্যতম খাদেম আবদুল আহাদ সিলেটভিউ-কে বলেন- এমন সাইনবোর্ড আগেও ছিলো। তবু নতুন করে আরও বেশি করে লাগানো হয়েছে- যাতে কোনো ভক্ত অতিরঞ্জিত করতে গিয়ে শরিয়তবিরোধী বা অসামাজিক কাজ না করে ফেলেন।

তিনি বলেন- আমরা মাজার কর্তৃপক্ষও চাই, এখানো কোনো শরিয়তবিরোধী বা অসামাজিক কাজ না হোক।

শাহপরাণ মাজারে ওরসকে কেন্দ্র করে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিলেটের মাজারগুলোতে চলমান অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি তুলেন স্থানীয় আলেমরা। এই অবস্থায় ৮ সেপ্টেম্বর শাহপরাণ (রাহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস শুরু হয়। এর আগে সিলেটের আলেমসমাজ শাহপরাণ মাজার ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ওরসের নামে অসামাজিকতা যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করেন। এসব বৈঠকে কমিটির নেতৃবৃন্দ ওরসে কোনো অসামাজিকতা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ওরস চলাকালীন তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে সে জন্য আলেম-সমাজের একটি প্রতিনিধি দল মাজার এলাকায় অবস্থান করছিলেন এবং সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রাখছিলেন। শেষদিন (১০ সেপ্টেম্বর দিবাগত) রাতেও তারা এ লক্ষ্যে মাজার এলাকায় অবস্থান করছিলেন। রাত ২টার দিকে ওরসে আসা মাথায় লাল কাপড় বাধা কিছু লোক তাদের উপর হামলা করে মারধর শুরু করেন। হামলার শিকার লোকজন এসময় মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা বাইরে অবস্থান নিয়ে তাদের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন এসময়।

খবর পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া আলেমসমাজকে উদ্ধার করেন এবং ওরসপন্থীদের উপর চড়াও হয়ে তাদের তাবুগুলো ভেঙে দেন। এসময় দুপক্ষের মাঝে সংঘর্ষে দুপক্ষর ৩০-৩৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত হন অন্তত ৫ জন। পরে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ঘটনার পর সিলেটের শাহজালাল-শাহপরাণসহ সকল মাজার থেকে অসামাজিক কার্যকলাপ দূর করতে ‘হযরত শাহজালাল রাহ. তাওহিদি কাফেলা’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেট মহানগরের কাজিরবাজারস্থ জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়ার মসজিদে এক বৈঠক করে এ কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কাজিরবাজার মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শায়েখ আব্দুস সুবহান। বৈঠকে সিলেটের শীর্ষ আলেম, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন।

‘হযরত শাহজালাল রাহ. তাওহিদি কাফেলা’ নামক কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুশতাক আহমদ খানকে। কাজিরবাজার মাদারাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদকে করা হয় সদস্যসচিব। পরে সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। কমিটিতে সদস্য রয়েছেন ১৫১ জন।

কমিটির সদস্যসচিব মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ সিলেটভিউ-কে বলেন, মাজারকেন্দ্রীক যত অনৈতিক কাজ যেমন- শিরিক, মাদকসেবন, নাচ-গান এসব বন্ধ করতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাজার ভাঙা এই কমিটির উদ্দেশ্য নয়। বরং কোনো অসাধু চক্র এই পরিস্থিতির সুযোগ যাতে মাজারের উপর আঘাত করতে না পারে সেদিকে এই কমিটি নজর রাখবে এবং তা ঠেকাবে।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাজারের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ১৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের সংস্থা-২ শাখা থেকে জারি করা চিঠিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে মাজারে পরিকল্পিত হামলা-ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই নির্দেশ জারি করে।

তবে এ নিদের্শনার আগেই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলেটের বড় দুটি মাজার- শাহজালাল ও শাহপরাণ রাহ.-এর মাজার এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পোশাধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও মাজারে নজরদারি করছে পুলিশ। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে বাহিনীটি। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের থানাগুলোকে সতর্কবার্তা প্রদানের পর এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।