প্রচ্ছদ সারাদেশ যে কারণে বাংলাদেশে সেনা অভিযান হবে ভারতের জন্য দুঃস্বপ্ন

যে কারণে বাংলাদেশে সেনা অভিযান হবে ভারতের জন্য দুঃস্বপ্ন

দেশজুড়ে: দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশ বাংলাদেশ, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভূরাজনৈতিক দিক থেকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের কিছু মহলে আলোচনা শোনা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালালে দেশটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দুই সপ্তাহ বা তারও কম সময় লাগতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি বাংলাদেশে সামরিক আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করে, তাহলে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ‘সেভেন সিস্টার্স’ অঙ্গরাজ্যগুলোতে অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে মনিপুরসহ আসামের পরিস্থিতি অশান্ত, যা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে, বাংলাদেশে আগ্রাসন চালানোর প্রচেষ্টা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এ ছাড়া, ভারতের সবচেয়ে দুর্বল কৌশলগত অঞ্চল হলো শিলিগুড়ি করিডোর, যা ‘চিকেন নেক’ নামেও পরিচিত। এটি মাত্র ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে। যদি এই করিডোর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে ভারত কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারত, আমেরিকা ও চীনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা চলছে। এ ইন্দোচীন অঞ্চলে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বিশাল বাজার রয়েছে, যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মতো পরাশক্তিগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।

বিশ্ব রাজনীতিতে চীন ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। সময়ে সময়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা গেলেও দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নে ভারত ও আমেরিকা মুখোমুখি হতে পারে। গ্রিক দার্শনিক থুকিডাইডিসের তত্ত্ব অনুযায়ী, বিদ্যমান পরাশক্তিগুলো কখনোই উদীয়মান পরাশক্তির উত্থান মেনে নেয় না।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা কৌশল ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ ও দুর্গম এলাকা রয়েছে, যা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে পরিচিত হলেও শত্রুপক্ষের জন্য তা অচেনা এক গোলকধাঁধা।

এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের পাশে থাকতে পারে, যা যেকোনো সামরিক উত্তেজনার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভারত তার ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ট্রানজিট সুবিধার নামে বিভিন্ন করিডর সুবিধা আদায়ের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যা বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে কৌশলগত, সামরিক ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করলে, ভারতের জন্য বাংলাদেশে আগ্রাসন চালানো সহজ নয়, বরং এটি ভারতের জন্য অভ্যন্তরীণ সংকট বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সূত্র: