জাতীয়: গত দুই দিনের অবিরাম বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে কুমিল্লা গোমতী নদীর পানি অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে।
গোমতীপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তাঁরা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনীর একাধিক টিম বাঁধ পর্যবেক্ষণে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষায় আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাঁধ ঝূঁকির মুখে পড়ায় রাতেও আমাদের টিম মাঠে ছিল। এখনো বাঁধে আছি। বৃষ্টির কারণে বাঁধের যেখানেই কিছুটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেখানে বালুর বস্তা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এভাবে পানি প্রবাহ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে বিষয়টি বাঁধের জন্য হুমকীর কারণ হতে পারে। তবে নদীর পাড়ের মানুষজনকে আতংকিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি। বাঁধে ফাঁটল বা ঝুঁকি আছে এমন পরিস্থিতি দেখলে তা পাউবো কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
পাউবোর সংশ্লিস্টরা বলেন, গোমতী নদীর ৯৫ সেন্টিমিটার এলাকায় আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি এলাকার গোমতী চরে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার রাত থেকেই বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিগার সুলতানা জানান, বাঁধের কিছু অংশ ঝুকিপূর্ণ, সকাল থেকে বাঁধে অবস্থান করে ঝুকিপূর্ণ পয়েন্টে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
এদিকে জেলার আদর্শ সদর উপজেলায় গোমতী চরে পানি বন্দি লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের সহায়তায় তিনটি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষায় জেলা প্রশাসন, পাউবো, সেনাবাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য সদর উপজেলার শালধর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমড়াতলী প্রতিবন্ধি উচ্চ বিদ্যালয় ও ধনেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে আশ্রিত ৪০টি পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলাটিতে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরও বৃষ্টি হতে পারে।