সারাদেশ: আউটসোর্সিং কর্মীর নামে ১৫৮ আওয়ামী লীগ কর্মীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নবায়ন করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। গত ৮ অক্টোবর ফাউন্ডেশনের সচিব আশরাফুল মমিন খান এ সংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ইফার ডিজির কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে ইফার আগারগাঁও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, আউটসোর্সিং কর্মীর নামে ১৫৮ জন আওয়ামী লীগ কর্মীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। তাদের সবাই বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছিলেন। এসব কর্মীর নিয়োগের সময় পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি, কোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন হয়নি এবং বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মীরা বিগত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকারের পক্ষে লাঠি নিয়ে মাঠে নামেন। এখনো তারা সমান দাপটের সাথে আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এসব আউটসোর্সিং কর্মীদের চাকরি নবায়নের ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের মতামতও নেয়া হয়নি। ধর্ম সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দার এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মরত ২৪তম বিসিএসের উপসচিব আশরাফুল মুবিন খান প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের রক্ষায় কাজ করছেন বলে ফাউন্ডেশনের ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত তাদের কয়েকজনকে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে ধর্ম উপদেষ্টার দফতরে পদায়ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের উপজেলা পর্যায়ের একজন আওয়ামী লীগ কর্মী মিজানুর রহমান মিজানকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আউটসোর্সিং পিয়ন হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাকে ধর্ম উপদেষ্টার ড্রাইভার হিসেবে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। অথচ সরকারি বিধান অনুসারে রাজস্ব খাতে স্থায়ী চাকরিজীবী ছাড়া ভিআইপিদের গাড়ি কেউ চালাতে পারে না। ড্রাইভার মিজানের শ্যালক টিটু ধর্ম সচিবের দফতরে গাড়ি চালান। মিজানের অপর শ্যালক ড্রাইভার জাহাঙ্গীর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। এ দুই ভাই মাদারীপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের কর্মী হিসেবে পরিচিত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে যাদের চুক্তি নবায়ন করার প্রক্রিয়া চলছে তাদের মধ্যে ক্যাটাগরি ১-এ রয়েছে ৬১ জন এবং ক্যাটাগরির ২ -এ রয়েছে ৯৭ জন। তাদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে ব্যয় হবে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আউটসোর্সিং খাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ৩টি পর্যায়ে প্রায় চারশ’ আওয়ামী লীগ কর্মী নিয়োজিত আছেন। তাদের পেছনে প্রতি মাসে ব্যয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। অথচ তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ নেই। সদ্য অবসরে যাওয়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অবসরে যাওয়া কর্মকর্তার কর্মচারীদের পেনশন দেয়ার মতো টাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনে নেই। অথচ আউটসোর্সিং নামে আওয়ামী লীগ কর্মীদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় কিভাবে করা হচ্ছে তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। দেশের সব জায়গায় পরিবর্তনের হাওয়া বইলেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কোনো পরিবর্তনের হাওয়া লাগেনি। এখনো ইসলামিক ফাউন্ডেশন চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন।
সূত্র: নয়া দিগন্ত