প্রচ্ছদ জাতীয় হারুনের আশীর্বাদে রাজা হতে চেয়েছিলেন আ.লীগ নেতা

হারুনের আশীর্বাদে রাজা হতে চেয়েছিলেন আ.লীগ নেতা

জাতীয়: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন-অর-রশিদের আশীর্বাদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রাজা হতে চেয়েছিলেন থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সায়েম শাহীন বেপারী। হারুনের নির্দেশে ডিবি পুলিশের পাহারায় ভোট কারচুপি করে ছিনিয়ে নেন ঢাকা উদ্যান বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতির পদ। হারুনের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন হওয়ায় ডিবি পুলিশকে দাঁড় করিয়ে দখল করতেন নতুন নতুন প্লট। যার ভয়ে ঢাকা উদ্যানের বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকতেন। পাশাপাশি, নিজের পরিবারের সদস্যদের সম্পদ দখল করে নানা রকম হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।

মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান হাউজিং এলাকায় বাড়ির মালিক সমিতির নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে ডিবি পুলিশের পাহারায় সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন তিনি। এরপর থেকে এ হাউজিং এলাকায় কেউ বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে বাড়ির মালিক সমিতির নামে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা দিতে হতো। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তার ওপর ভয়াবহ নির্যাতনসহ বাড়ির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হতো। এ ছাড়া আবু সায়েম শাহীন ডিবি হারুনের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থেকে শুরু করে নতুন নতুন ব্যবসা শুরু করেন। কিশোরগঞ্জে হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট, দেশের বাইরে স্বর্ণের চোরাচালানের ব্যবসা ও সফরসঙ্গী হিসাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন শাহীন।

ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের অপর প্রান্তে ‘জিঞ্জা’ নামক চাইনিজ রেস্তোরাঁ, গুলশানে মদের বার, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট ব্যবসায় ডিবির হারুনকে শেয়ার দিয়ে সঙ্গী করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহীনের নির্দিষ্ট একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল। যারা সড়কে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ঢাকা উদ্যান, তুরাগ হাউজিং, বেড়িবাঁধ এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উদ্যান হাউজিং বাড়ির মালিক সমিতির সাবেক এক সভাপতি বলেন, আমি গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলাম। ভোটে দাঁড়ানোর পর থেকে আমাকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হুমকি দিয়েছিল। আমি ওইসব হুমকির পরোয়া না করায় আমাকে ডিবির হারুন ডেকে নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হুমকি দেন।

ঢাকা উদ্যান এলাকার বাড়ির মালিক আবুল হোসেন বলেন, আমি এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি। শেখ হাসিনা পতনের আগে বাড়িটি বহুতল ভবন করার জন্য কাজ শুরু করেছিলাম। হঠাৎ করে ঢাকা উদ্যান বাড়ির মালিক সমিতির লোক এসে আমার কাজ বন্ধ করে দিয়ে সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে বলে। আমি তখন দেখা না করায় একদল সন্ত্রাসী এসে আমাকে আবারও হুমকি দিয়ে গালাগাল করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। ওই ঘটনার পর আমি সমিতির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও আমি পারিনি। পরে আমি নিরুপায় হয়ে বাড়ির কাজ বন্ধ রাখি।

আরেক বাড়ির মালিক আলী আশ্রাফ বলেন, আমি ঢাকা উদ্যান এলাকায় বাড়ির কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছি। আমার জায়গায় আমি বাড়ি করবো কিন্তু সেখানে বাড়ির মালিক সমিতির অফিসে টাকা দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এ অবস্থা দেখে আমি নিজেই আমার বাড়ির কাজ বন্ধ করে রেখেছি।

ঢাকা উদ্যানে শাহীনের অবৈধ দখল-বাণিজ্যের প্রধান সঙ্গী তালেব আলীর ছেলে বরকত উল্লাহ। ঢাকা উদ্যানে আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন ঘাট দখল করে বিআইডব্লিউটির নাম ব্যবহার করে চাঁদা উঠাতেন এই বরকত। শাহীন পলাতক থাকলেও পুরো গ্যাং সামলাচ্ছেন বরকত।

গা-ঢাকা দেওয়ায় আবু সায়েম শাহীনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।