
দেশজুড়ে: গোপালগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁর আবাসিক কক্ষে ফেরদৌস শেখ (৪৫) নামে এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে। বুধবার রাতে সদর উপজেলার পাথালিয়া এলাকার পিঠা গার্ডেন থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ফেরদাউস শেখ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া পার ঝনঝনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর গরুর খামার রয়েছে। ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর ভাই মিজানুর রহমানের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পিঠা গার্ডেনের অবস্থান ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে। এটি রেস্তোরাঁ হলেও রাতে থাকার জন্য কক্ষ রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রেস্তোরাঁটির আবাসিক কক্ষে অসামাজিক কার্যকলাপ চলত।
জানা গেছে, মঙ্গলবার এক নারীকে নিয়ে সেখানকার একটি কক্ষে ওঠেন ফেরদৌস। বুধবার রাতে তাদের সেই কক্ষ ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। বিকেল পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ না পেয়ে রেস্তোরাঁর কর্মকর্তারা কক্ষে গিয়ে ফেরদৌসের লাশ দেখতে পান। তাদের ভাষ্য, এর আগেই ওই নারী পালিয়ে যান।
ভাই মিজানুরের ভাষ্য, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে ১২ নভেম্বর একটি মামলা হয়। এতে ফেরদাউস শেখকে আসামি করা হয়। এ কারণেই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা সন্দেহ করছেন।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার ভাই বাসা থেকে বের হয়। একসঙ্গে ভাত খাওয়ার জন্য রাত ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে কল দিই। আমাকে বলল, ‘টুঙ্গিপাড়ায় বন্ধুর বাড়িতে আছি, পরে আসব।’ সকালে তাঁর ফোনে কল দিলে বন্ধ পাই।’ পরে গোপালগঞ্জ থানা থেকে লাশ উদ্ধারের কথা জানায়।
এক মাস আগে ফেরদাউস যমজ মেয়ের বাবা হয়েছেন জানিয়ে মিজানুর বলেন, দুই মেয়েকে নিয়ে পরিবারের সবাই আনন্দিত। নিষ্পাপ দুটি বাচ্চা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবাকে হারাল।
পিঠা গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী ফারুক হোসেন বলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দু’জন তাঁর হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। কর্মচারীরা কক্ষ বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকে ওই ব্যক্তির লাশ দেখতে পান। কীভাবে তিনি মারা গেছেন, তা জানা নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে ফেরদাউস শেখের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। আসরের নামাজের পর বাঁশবাড়িয়া ঝনঝনিয়া মাদ্রাসা মাঠে তাঁর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মীর সাজেদুর রহমান বলেন, বুধবার দুপুরে পিঠা গার্ডেনের ব্যবস্থাপক তুহিন মোল্লা থানায় এসে জানান, মঙ্গলবার রাতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলের কক্ষ ভাড়া নেন এক ব্যক্তি। বুধবার সকালে নারীটি কৌশলে বেরিয়ে যান। দুপুরেও ওই ব্যক্তি কক্ষ থেকে বের না হলে কর্মীরা লাশ দেখতে পান। সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও ব্যবস্থাপকের কথার সত্যতা মিলেছে। বৃহস্পতিবার লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বাকি তথ্য প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে।