শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের বিষয়ে বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতি মো, সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত দুদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
পরিস্থিতি বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে এবং অন্য কোনো কারণে যদি এই পদ শূন্য হয়, তাহলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হবেন?- এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
এবিষয়ে সংবিধান বিষেশজ্ঞরা বলছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব বিষয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক গণমাধ্যমকে বলেন, সংবিধানের বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে পারে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সংসদ বাতিল করে দেওয়ায় সেই সুযোগ আর নেই। আবার রাষ্ট্রপতি চাইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করতে পারেন।
তিনি বলেন, কিন্তু স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকার কারাগারে থাকায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি উঠলেও সেটি সংবিধান অনুযায়ী হওয়া সম্ভব নয়।
শাহদীন মালিক বলেন, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে সংসদ। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। আবার তার পদত্যাগের সুযোগও নেই। সে কারণে সংবিধান ও আইনগতভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
দেশের প্রথিতযশা এই আইনজ্ঞ বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের বিদায়ের পর, সবকিছু তো সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর; বরং জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার চাইলে করতেই পারে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন বা অন্য কোনো কারণে এই পদ শূন্য হয়ে যায়, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, এখন যে সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে, সেটি জন-আকাঙক্ষার ভিত্তিতে। ফলে এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা নিয়োগের বিষয়ে জন-আকাঙক্ষার প্রতিফলিত হবে।
তিনি বলেন, প্রশ্ন উঠতে পারে, রাষ্ট্রপতি কীভাবে পদত্যাগ করবেন আবার পদ শূন্য হলে নিয়োগ পাওয়া নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাবেন কে? এখানেই জন-আকাঙক্ষার ভিত্তিতে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবকিছু হবে।
উল্লেখ্য, মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তার সঙ্গে দেওয়া একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়ত তার সময় হয়নি।
সাক্ষাৎকারটি গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকেই রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তারা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।
সুূুত্রঃ যুগান্তর