দেশজুড়ে: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সৌদি আরবে অবস্থানের একটি ছবি দিয়েছেন। গত শনিবার ছবিটি দিয়ে তিনি ক্যাপশনে লেখেন, ‘দোয়ার দরখাস্ত’। সরকার পতনের পর আত্মগোপনে গিয়ে এটাই তার প্রথম ফেসবুক পোস্ট। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
রবিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পোস্ট করা ছবিটিতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ শেয়ার ও ৮ হাজার কমেন্ট পড়েছে। পাশাপাশি রিঅ্যাক্ট পড়েছে প্রায় ১৩ হাজার। কমেন্টেসে তার অনুসারীরা আলহামদুলিল্লাহসহ বিভিন্ন ধরনের পজিটিভ মন্তব্য করেছেন। তবে অধিকাংশ মন্তব্যই তার বিরুদ্ধে। কেউ কেউ তাকে লক্ষ্মীপুরে আমন্ত্রণ জানিয়ে লিখেছেন ‘শিক্ষার্থীদের ওপর কতটি গুলি করেছেন, কত মায়ের বুক খালি করেছেন, তার হিসাব দিয়ে যেতে’। আত্মগোপনে যাওয়ার ২ মাস ৮ দিন পর ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। এতে অনেকেই তার ফাঁসি দাবি করেছেন। অনেকে কটাক্ষ করে সমালোচনাও করেছেন।
শাকিল নামে একজন লিখেছেন, ‘দেশে আসেন ভাই, গুলির হিসাব দিয়ে যান।’ মুহা. কাউছার হাবীব লিখেছেন, ‘তোদের বিচার একদিন বাংলার জমিনে হবে ইনশা আল্লাহ’। ইদ্রিস মিয়াজি লিখেছেন, ‘আপনি তো প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন, আপনার হাতে এখনও রক্তের দাগ লেগে আছে, বাংলার মাটিতে আপনার জায়গা হবে না, আপনার বিচার আল্লাহ অবশ্যই করবে।’
মো. ইসমাইল লিখেছেন, ‘কেন আবার এসে গুলি করতেন? আপনাকে আসলেই অনেক ভালো জানতাম, আপনি এটা একটা কাজ করলেন, ছি’! আবদুল মুতালিব লিখেছেন, ‘থেরাপি তো মাফ হবে না, লক্ষ্মীপুরের কলঙ্কিত সন্তান’। রাকিবুল হাসান নকিব লিখেছেন, ‘দেশে আসেন ব্রো, সবগুলোর গুলির হিসাব দিয়ে যাইয়েন, যতগুলো মায়ের বুক খালি করেছেন, এগুলোর হিসাবে দিয়ে যাইয়েন, কীভাবে পারেন এসব আমার মাথায় আসে না।’
মাহিম হোসেন লিখেছেন, ‘মক্কা শহরের সবাই ভয়ে আছে, কখন আবার ফায়ার হয়’? রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘আল্লাহ আপনাকে ফাঁসির জন্য কবুল করুক।’ শাহাদাত হোসেন লিখেছেন, ‘পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরে এখন সাধু সাজেন।’ রায়হান লিখেছেন, ‘মানুষ মেরে ওমরাহ পালন, সৃষ্টিকর্তার সাথে দারুণ অভিনয়।’ গাজী সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ‘পীর সাহেব, আপনি পালাইছেন কবে?’ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বাসার ছাদ থেকে গুলি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছিস। তোর ক্ষমা নেই। লক্ষ্মীপুরবাসী তোকে কখনও ক্ষমা করবে না। তোর বিচার লক্ষ্মীপুরেই হবে…।’
আবার অনেকেই ছবিতে মন্তব্য করেছেন এটি পুরোনো। নতুন করে ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি পুরোনো ছবি ফেসবুকে ছেড়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে টিপু সরাসরি জড়িত। কিন্তু তিনি এখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তার অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী নুর মোহাম্মদ বলেন, টিপু চার শিক্ষার্থী খুনের আসামি হয়েও দুই মাসে ধরা পড়েননি। তার গাড়িচালক মো. রাসেল অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেছেন। তাকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
সদর মডেল থানার ওসি আবদুল মুন্নাফ বলেন, শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতÑ অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকার বাসার ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ করেন টিপুসহ তার সহযোগীরা। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় চার শিক্ষার্থী। আহত হয় শতাধিক। এ ঘটনার জেরে পিটুনিতে নিহত হয় আরও ৮ জন। ওইদিনই টিপু পালিয়ে যান। এরপর থেকে কেউই তার অবস্থান জানতে পারেননি।
একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে। ছাত্র আন্দোলনে চার শিক্ষার্থী হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলা মামলার প্রধান আসামি তিনি।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট