প্রচ্ছদ সারাদেশ বাংলাদেশের পাচার টাকা ফেরাতে যা জানালো আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশের পাচার টাকা ফেরাতে যা জানালো আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক

বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কারিগরি ও নীতিগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। ওয়াশিংটনে সংস্থা দুটির সদর দপ্তরে চলমান বার্ষিক সভায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এমন কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর আগেও সংস্থা দুটি এমন সহযোগিতার কথা একাধিকবার জানিয়েছে; কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর তেমন অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে।

একই দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদর দপ্তরে দেশের চলমান অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের কাছে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া মিলছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় তিনি আরও জানান, নানা সংকট আর চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

বার্ষিক সভার দ্বিতীয় দিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট প্রকাশ করে আইএমএফ। যাতে সংস্থাটি বলেছে, এ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৪ শতাংশ। তবে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্ট ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এবারের বার্ষিক সভা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। তাই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আস্থা ফেরাতে একাধিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন নতুন বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকরা। অবশ্য আগের সরকারের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও লাখ লাখ কোটি টাকা লোপাট সত্ত্বেও অর্থ উপদেষ্টা ওই সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসাই করেছেন বিশ্বব্যাংকের সভায়। এমনকি আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকও প্রশংসায় ভাসিয়েছে বাংলাদেশকে। সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৯০-এর পরের সব সরকারই এ দেশের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, এটা অনস্বীকার্য। এখানে কোনো সরকারকেই বাহবা দেওয়া বা কাউকে হেয় করার মতো একক কোনো বিষয় নির্ভর করে না।

এদিন প্রকাশিত গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে বলা হয়, এখনো বহু দেশে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ও চড়া সুদহার নিয়ে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশকে এ খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়তা দেবে আইএমএফ।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নতির ধারাবাহিকতার স্বীকৃতি পেল আরও একবার বিশ্বমঞ্চে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বৈঠকে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সামষ্টিক অর্থনীতি এবং মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেছেন।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নব্বই-পরবর্তী সব সরকারই এই কৃতিত্বের দাবিদার। সরকারের পাশে থাকবে উন্নয়ন সহযোগীরা, সেই প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ ৬৮টি দেশের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই নিম্নগতি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় সরকার। বরং ধাক্কা সামলে ভালো কিছুর প্রত্যাশা রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে, শিগগির তার হিসাব জানা যাবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী মনে করছেন, সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা দিতে সম্মত হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা।