প্রচ্ছদ জাতীয় পিটার হাস বাংলাদেশে, নির্বাচনের আগে আবার আলোচনায়

পিটার হাস বাংলাদেশে, নির্বাচনের আগে আবার আলোচনায়

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন কর্মকর্তাদের মধ্যে সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে আলোচিত এবং পরিচিত নাম পিটার ডি হাস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন তিনি। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার অতি-সক্রিয়তার বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারেনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে বিরোধী দলগুলোর কাছে রীতিমতো ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন হাস। সেই সুবাদে ওই সময়ে দেশের প্রত্যন্ত জনপদেও আলোচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

এরপর বেশ কিছুদিনের নীরবতা। এরই মধ্যে অবশ্য পেশাদার কূটনীতিক জীবনেরও টেনেছেন সমাপ্তি। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবারও আলোচনা এসেছে পিটারের নাম।

এর মধ্যেই ঢাকায় এসেছেন পিটার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে অবসর নেওয়ার পর এখন তিনি ওই দেশের বহুজাতিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। সেই পরিচয়েই গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইকে-৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে ঢাকায় এসেছেন তিনি। গতকাল রোববার দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকও করেন।

বহুল আলোচিত এই মার্কিন কূটনীতিক এমন সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন যখন আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। গত দুই মাসে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান জানতে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ে ২০টিরও বেশি বৈঠক হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, পিটার হাসের এবারের ঢাকা সফরে পূর্ব বন্ধুত্বের সূত্রে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে দোহা হয়ে ওয়াশিংটনের পথে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে তার।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত থাকাকালে নানা কারণে সব সময়েই আলোচনায় ছিলেন পিটার হাস। গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মাত্র কয়েকদিন আগে তিনি বাংলাদেশে তার দায়িত্ব পালন শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে ২৭ সেপ্টেম্বর দেশটির ফরেন সার্ভিস থেকে অবসর নেন। এর মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ১ অক্টোবর যোগ দেন এক্সিলারেট এনার্জিতে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানির মার্কিন এই বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে। কোম্পানিটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনা করে। তার নিয়োগের পর প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে সে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে কাজ করেছেন পিটার হাস। তার এ অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাতে চায় এক্সিলারেট এনার্জি। সেই হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা বাড়াতে যে কোনো সময় বাংলাদেশে আসতে পারেন আলোচিত সাবেক এই কূটনীতিক। তাই ফরেন সার্ভিস থেকে অবসরে গেলেও বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার সুযোগ হারাননি তিনি। গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের গুঞ্জনে ফের আলোচনায় আসেন পিটার হাস। যদিও তখন তিনি অবস্থান করছিলেন ওয়াশিংটনে। ২০২২-২০২৪ সময়কালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পিটার হাসের তৎপরতা ছিল দৃশ্যমান, যার জন্য বরাবরই ছিলেন আলোচনায়। গত এপ্রিলের ঢাকা সফরে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্সের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বিষয়ক বৈঠকে অংশ নেন পিটার হাস। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। সর্বশেষ সফরটিতে পিটার হাস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন, সে সময় আলোচনা করেন নানা বিষয়ে। এপ্রিলের পর গত শনিবার আবার ঢাকায় এসেছেন তিনি।

কক্সবাজারে এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের গুঞ্জনে তোলপাড় : গত বছরের আগস্টে রক্তক্ষয়ী গণবিক্ষোভের পর ছাত্র-জনতার ইচ্ছাতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তির বিশেষ দিন গত ৫ আগস্ট এনসিপির পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে যান। সেখানে হোটেল সি পার্লে তারা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠক করছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা অংশ নেন ওই বৈঠকে। সঙ্গে তাসনিম জারার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহ ও সারজিস আলমের স্ত্রী ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে। অবশ্য ওয়াশিংটনের একটি সূত্র সে সময় কালবেলাকে নিশ্চিত করে যে, পিটার হাস বাংলাদেশে নন, বরং ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। ‘কক্সবাজার বৈঠকের’ সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঢাকায় পিটার হাস।

বাংলাদেশে পিটার হাস কেন এত আলোচিত: রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপট এবং নতুন পরিচয়ে পিটার হাসের বাংলাদেশে ফিরে আসা—এ দুটোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সংশ্লেষ রয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। কোনো কোনো বিশ্লেষকের ভাষ্য, তিনি কি সত্যিই অবসর নিয়েছেন, নাকি অন্য পরিচয়ে কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন? গত বছর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘ইনক্লুসিভ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন দেওয়া নিয়ে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন পিটার হাস। জোরপূর্বক গুম নিয়েও তার অবস্থান স্পষ্ট ছিল। সে সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনি নিয়মিত আলোচনা করতেন, সব মিলিয়ে তখন আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন সাবেক এই কূটনীতিক। যদিও নির্বাচন শেষে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্ব এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন তিনি। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর চার মাস দায়িত্ব পালন শেষে গত বছরের ২২ জুলাই মধ্যরাতে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান বহুল আলোচিত পিটার হাস। পরদিন ২৩ জুলাই রাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম লিংকডইনে ভেরিফায়েড ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে পিটার হাস বলেন, ‘এভাবে বাংলাদেশ মিশন শেষ করতে হবে ভাবিনি। আমি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাচ্ছি। দূতাবাসের সব কর্মী, আমার সহকর্মী, পরিবার, বন্ধু ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।’

লিংকডইনের ওই পোস্টে মার্কিন দূতাবাসের একটি ফেসবুক পোস্টও যুক্ত করে দেন হাস, যা ছিল বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত। কারণ সে সময় দেশে জুলাই আন্দোলন ঘিরে বিরাজ করছিল উত্তপ্ত পরিস্থিতি। তার ঢাকা ত্যাগের কয়েকদিন পরই সারা দেশে একদফার দাবি ওঠে। বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে যাচ্ছেন জানানোর কয়েকমাস পরই নতুন দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশে আসেন পিটার হাস এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। যদিও ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দাবি, পিটার হাস এখন বেসামরিক নাগরিক, তাই তার সঙ্গে দূতাবাসের কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এত কিছুর পরও পিটার হাসের পূর্বের রাজনৈতিক তৎপরতা এবং এখনো নানা সময়ে বাংলাদেশে অবস্থান আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকের মতে, ফরেন সার্ভিসের দায়িত্ব ছেড়ে আবারও তার ঢাকায় ফিরে আসা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

ত্রয়োদশ নির্বাচন ঘিরে মার্কিন তৎপরতা: বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যমান। গত তিন মাসে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা একাধিক রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কমিশন, বিচার বিভাগ এবং উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক শুধু সৌজন্য নয়, বরং প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচন এলেই মার্কিনিদের এমন তৎপরতা লক্ষ করা যায়। এর আগের নির্বাচনগুলোর আগেও এমনটি হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহ নানা কৌশলগত কারণেই থাকে। গত বছরের জুলাইয়ে পিটার হাস রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব থেকে অবসরে গেলে বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পান ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। ঠিক ১৭ বছর আগে দুই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঢাকায় যাওয়া-আসার মাঝখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কাকতালীয় হলেও ২০০৭ সালের মতো এবারও বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালনের সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব কিছুদিন পালন করবেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ)। ওই সময় ২০০৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস; কিন্তু ১৪ মাসের মাথায় হঠাৎই মার্কিন প্রশাসন তাকে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়। ফলে তিনি বেশ তাড়াহুড়া করেই ঢাকা ছেড়ে যান। ২০০৮ সালের এপ্রিলে জেমস এফ মরিয়ার্টি পরের মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে ৯ মাস ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলেছিলেন গীতা পাসি।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এরই মধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। তার নেতৃত্বে এই বৈঠকগুলোতে নির্বাচনকালীন কাঠামো, মানবাধিকার পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব এবং ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলাকে জানায়।

সূত্রটি আরও জানায়, গত ২২ জুন গুলশানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামা ওবায়েদ। আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচন, আন্তর্জাতিক চাপসহ নানা ইস্যু। এরপর গত ৪ জুলাই ঢাকা ত্যাগ করে বিদেশে যান যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত। জানা যায়, সেই সফরে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশে ফেরার আগে বৈঠক করেন ট্রেসি। পরে ১৪ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন ব্যক্তিগতভাবে তারেক রহমানের সঙ্গে পরিচিত হতে গিয়েছিলেন। তারেক রহমান কীভাবে গত ১৫ বছর ধরে দল পরিচালনা করছেন, শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে কীভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন—এসব গল্প শুনেছেন তিনি।

পরে দেশে ফিরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার বৈঠক করেন জ্যাকবসন। জামায়াতে ইসলামী নেতাদের সঙ্গে গত ২১ জুলাই মগবাজারে এবং ১৭ জুলাই বারিধারায় পৃথক বৈঠকে রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের রাজনৈতিক কাউন্সেলর উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলাকে নিশ্চিত করে যে, জামায়াতের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়। পরে ১১ আগস্ট গুলশানে এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় ট্রেসির। দলীয় অবস্থান, নির্বাচন-পূর্ব সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছিল ওই বৈঠকের আলোচ্য বিষয়।

এ ছাড়া গত তিন মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের। ২৪ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, ১২ আগস্ট সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং ঐকমত্য কমিশনের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এবং ১০ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উঠে আসে নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক কাঠামো, স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বের প্রশ্ন। এসব বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সেলর এরিক গিলান নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। যা এমন ইঙ্গিত দেয় যে এই সংলাপগুলোর রাজনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে। এছাড়া গত ১৪ আগস্ট প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জ্যাকবসনের বৈঠকে বিচারিক স্বাধীনতা ও নির্বাচনকালীন আইনি কাঠামো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহকে স্পষ্ট করে। এই ধারাবাহিক বৈঠকগুলো শুধু পর্যবেক্ষণ নয়, বরং ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের সম্ভাব্য রূপরেখা এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত দেয় বলে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতা প্রমাণ করে, নির্বাচন ঘিরে তারা শুধু নীতিগত অবস্থান নয়, বরং কৌশলগত প্রভাবও নিশ্চিত করতে চায়।
সূত্র: কালবেলা