প্রচ্ছদ সারাদেশ পার্ক যেন বেডরুম, ৫০ টাকায় তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা

পার্ক যেন বেডরুম, ৫০ টাকায় তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা

পার্ক নয়, যেন অনৈতিক কার্যকলাপের আখড়া। স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে প্রেমিক-প্রেমিকার পদচারণায় যেটি হয়ে উঠেছে ‘নিরাপদ ডেটিং স্পটে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে হাতে হাত রেখে পার্কে প্রবেশ করছেন শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণীরা। প্রথম দেখায় যে কারও মনে হতে পারে প্রেমিক যুগল নিরিবিলি কথা বলতেই ঢুকেছেন পার্কে। চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন- কোথায় পাবেন সুবিধামতো জায়গা। এরপর সুযোগ বুঝে চলে যাচ্ছেন নির্জন স্থানে। এভাবেই চলছে সাতক্ষীরার মোজাফফর গার্ডেন অ্যান্ড রিসোর্ট।

এটি পার্ক নয়, যেন অনৈতিক কার্যকলাপের মিলনখানা। স্কুল কলেজ চলাকালিন প্রেমিক-প্রেমিকার পদচারণায় এটি হয়ে উঠেছে ‘নিরাপদ ডেটিং স্পটে। যেখানে অনেক প্রেমিক যুগল সুযোগ বুঝে লিপ্ত হচ্ছেন শারীরিক মিলনে। মাত্র পঞ্চাশ টাকার টিকিটে সেখানে চলছে এসব কার্যকলাপ।

প্রকাশ্যে এমন অনৈতিক কার্যকলাপ চললেও তাতে নেই কারও মাথাব্যাথা। পার্কের প্রতিটি কোণায় কোণায় যেনো প্রেমিক যুগলের শারীরিক মিলনের আখড়া। কেউ স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে আবার কেউ পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরেই চলে যাচ্ছেন সেখানে।

এছাড়াও প্রেমিক যুগলদের একান্ত সময় কাটানোর জন্য রয়েছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষ কক্ষ। এভাবেই আধুনিকতার নামে সাতক্ষীরার মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্টে চলছে এসব অনৈতিক কাজ।

সম্প্রতি মোজাফফার গার্ডেন এন্ড রিসোর্টে প্রকাশ্যে প্রেমিক যুগলের অনৈতিক কার্যকলাপের বেশ কিছু ভিডিও আসে কালবেলার প্রতিবেদকের কাছে। ভিডিওতে দেখা যায়, রিসোর্টের পুকুর পাড়ে ও ঝোপঝাড়ের আড়ালে চলছে অনৈতিক কার্যকলাপ। এদিকে পরিচয় গোপন করে কল দিয়ে পার্সোনাল রুম চাইলেও দিয়ে দিচ্ছেন।

ঘুরতে আসা সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, আমরা জনপ্রতি ৫০ টাকার দিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করি। তবে আমরা যারা পরিবার নিয়ে আসি, তারা ভালোভাবে ঘোরাফেরা করতে পারিন না। কারণ আমরা বিভিন্ন অশ্লীলতার সম্মুখীন হই। এখানে আগে যে পরিবেশটা ছিল বর্তমানে তা নেই। তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও সচেতন নাগরিকদের কাছে এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান করার অনুরোধ জানান।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র নাঈমুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাবা-মা আমাদেরকে লেখাপড়ার জন্য স্কুল কলেজে পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই স্কুল কলেজের মূল্যবান সময় নষ্ট করে যারা পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা ভুল করছে। শিগগিরই যেসব পার্ক কর্তৃপক্ষ ইস্কুল কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের পার্কে ঢুকতে দিচ্ছেন তাদের এ কর্মকাণ্ড বন্ধ করার দাবি জানান।

স্থানীয় আবু রায়হান সিদ্দিকী বলেন, পার্কের মধ্যে প্রকাশ্য এমন অশ্লীলতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে যেয়ে যখন এসব দেখি, তখন বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের জিরোপয়েন্ট থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে খড়িবিলা নামক স্থানে প্রায় ১শ ২০ বিঘা জমির উপরে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে সাতক্ষীরা মোজাফফর গার্ডেন অ্যান্ড রিসোর্ট। এটি স্থানীয়ভাবে মন্টু সাহেবের বাগান বাড়ি নামেও পরিচিত। রিসোর্টটির অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ, ফুল-ফল ও পশু-পাখির সমারোহ রয়েছে। সমগ্র মোজাফফর গার্ডেন ও রিসোর্ট জুড়ে তৈরি করা হয়েছে হাতি, বাঘ, হরিন, জিরাফ, কুমির, পাখি, সাপসহ নানা প্রাণীর ভাষ্কর্য। এজন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দর্শনার্থীরা আসেন তারা দিন ও রাতের উভয় সৌন্দর্যই উপভোগ করার জন্য চেষ্টা করেন।

মোজাফফর গার্ডেন অ্যান্ড রিসোর্টে থাকার জন্য আধুনিক সরঞ্জাম সজ্জিত একাধিক গেস্ট হাউস আছে। সেখানে থাকার জন্য ১৬টি এসি, নন-এসি রুম আছে। কিন্তু এই পর্যটন কেন্দ্রটি সাতক্ষীরাবাসীর জন্য কোনো সময়ই স্বস্তির কারণে হয়ে উঠেনি। বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে শুরুর কয়েক বছরপর থেকেই এখন পুরোদমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আখড়া হয়ে উঠেছে।

এদিকে পরিচয় গোপন করে রিসোর্টের রিসিপশনের মোবাইল নাম্বারে কল দিয়ে বান্ধবীসহ থাকার জন্য রুম বুকিং করতে চায় প্রতিবেদক। তখন রিসিপশনের দায়িত্ব থাকা তৈবুর রহমান বলেন দুজনের এনআইডি কার্ড নিয়ে আসলেই থাকার জন্য রুম পাবেন। আমাদের এখানে কোন সমস্যা হবে না।

তবে সাংবাদিক পরিচয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোজাফফর গার্ডেন অ্যান্ড রিসোর্টের রিসিপশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৈবুর রহমান অনৈতিক কর্মকাণ্ড অস্বীকার করে বলেন, এমন কোনো কর্মকাণ্ড হওয়ার উচিত না, এগুলো হয়ও না। আমরা যখন রুমগুলা বুকিং করি অফিশিয়ালি প্রোগ্রাম হলে অফিস থেকে মেইল আসে, তখন বুকিং করা হয়। আমরা যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে রুম বুকিং করে থাকি।

স্থানীয় অভিভাবক আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের মা-বাবাদেরকে আরও সজাগ হতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবকদের সমন্বয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে সচেতন করতে হবে। স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময় শিক্ষার্থীদের যে পার্কে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে কথা হয় শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে, তিনি জানান, স্কুল চলাকালে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী পার্কে কিংবা কোথাও ঘুরাফেরা করা উচিত নয়। তাছাড়া এ বিষয়ে শিক্ষকদের পাশাপাশি অবশ্যই অবিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এসব ঘটনার বিষয়ে আমি জানি না। তবে আমরা দ্রুতই পার্কগুলোর মালিকদের ডেকে কথা বলবো যাতে পার্কের ভেতরে এরকম অনৈতিক কোনো কার্যকলাপ না চলে। সেইসঙ্গে স্কুল ড্রেস পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের নজরদারিতে রাখতে হবে যেন তারা ক্লাস চলাকালীন সময়ে পার্কে যেতে না পারে।

এসব বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তক আহমেদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা রাতে পার্কে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনৈতিক কার্যকলাপের ঘটনা থাকলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যেতে পারে। কোনো সুনিদিষ্ট ঘটনা থাকলে আমাদেরকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।