সারাদেশ: বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার গ্রহণযোগ্য হবে না। আর অন্যদিকে জামায়াত বলছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এ নিয়ে দল দুটির মধ্যে ‘অদৃশ্য দ্বন্দ্ব’ দেখা দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা। এরপরই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
এ সরকারের দুই মাস পার হলেও এখনো সংস্কার বা নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল বিএনপি ও জামায়াত। গত দুই মাসে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেন মুহাম্মদ ইউনূস। এসব বৈঠকে বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব ও রোডম্যাপ দেয়। তবে এরইমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য, জ্যেষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে বলে আসছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার গ্রহণযোগ্য হবে না। এ জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছেন তারা।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘গুরুত্ব’ পাওয়া দেশের বৃহত্তম ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াত বলে আসছে, বর্তমান সরকারকে নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে। যেসব সংস্কারের দাবিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছেন, সেসব যদি না করা হয়, তবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এদিকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দ্রুতই প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।
বৈঠকে বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানালেও জামায়াত আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমের ওপর জোর দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের জন্য দ্রুত রোডম্যাপ দেওয়ার কথা বলেছি। এ ছাড়া আমরা নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন স্থগিত করে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছি। তিনি আরও জানান, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিতর্কিত কমিশনারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে রায় দেওয়া সাবেক বিচারপতি খায়রুল হকের বিচারের দাবিও তুলে ধরেছে বিএনপি।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের দুই ধাপের রোডম্যাপের কথা তুলে ধরে। দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেন, প্রথম রোডম্যাপটি হবে সংস্কারের, আর দ্বিতীয়টি নির্বাচনের। সফল সংস্কারের পরই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে বলে আমরা মনে করি। এদিকে, বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। এতে ৪১টি প্রস্তাবের মধ্যে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির পক্ষ থেকে ২০২২ সালে রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে তা ৩১ দফায় উন্নীত হয়। আজকে দেওয়া এসব প্রস্তাব বিএনপি আগে ঘোষণা করেছে। জামায়াতের দেওয়া প্রস্তাবনায় বিএনপির সেসব প্রস্তাবকেই সমর্থন জানানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।