বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র ঘোষিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমন্বয়কদের সঙ্গে অন্যান্য সমন্বয়কদের সমন্বয়হীনতা দেখা দেওয়ায় পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমন্বয়ক ও চার সহ-সমন্বয়ক। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের বিষয়টি জানান তারা।
পদত্যাগ করা সমন্বয়করা হলেন, সমন্বয়ক সুমাইয়া সিকদার, সহ-সমন্বয়ক আল মাসনুন, ধ্রুব বড়ুয়া, সাইদুজ্জামান রেদুয়ান এবং ইশা দে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, বৈষমাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে একটি সফল গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হলেও পরবর্তীতে তাদের মধ্যে নানা ধরনের সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সমন্বয়করা জবাবদিহিতা করছেন না এবং নানা ধরনের সাফাই দিচ্ছেন। যা অনেকাংশেই একপাক্ষিক। প্রথম থেকেই যেসব সমন্বয়হীনতা ও অপরাজনীতির আভাস পেয়েছি, আমরা সেগুলোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি।
তারা বলেন, প্রক্টর ও প্রভোস্টদের পদত্যাগের যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিকতা বিষয়ে নানা ধরনের বিতর্ক উঠে আসছিল। আমরাও তাদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ধাপে ধাপে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আগমন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সকল প্রকার লেজুড়বৃত্তিক ও দখলদারি দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের ব্যবস্থা করেই যেন ভিসি পদত্যাগ করেন। কিন্তু কোননো মতামতকে যাচাই-বাছাই না করেই সমন্বয়করা ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে ফেলেন। শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে সমালোচনার সঠিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি সমন্বয়ক কমিটিতেও।
তারা আরও বলেন, আন্দোলনের সময় চবিতে সমন্বয়কের সংখ্যা ছিল ২২ জন। কিন্তু পরবর্তীতে ৫ আগস্ট চবিতে সমন্বয়নের সদস্য সংখ্যা হয় ৩০ জন। নতুন যেই কয়জন কমিটিতে যুক্ত হয়েছে তাদের বিষয় নিয়েও মূল সমন্বয়করা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এমন সব ঘটনা, জবাবদিহিতা না থাকা ও ট্যাগা-ট্যাগির ফ্যাসিস্ট বয়ান আমাদের মনে স্বাভাবিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। ক্যাম্পাস সংস্কারের কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তারা তৎপর নন, প্রভোস্টদের পদত্যাগ না করিয়ে হলে শিক্ষার্থীদের উঠানোর ব্যাপারে আরও ভালো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারতেন। তাই আমরা ৫ জন সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। আগামীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যে সকল কর্মসূচি পালন হবে তার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমরা সব সময় ছিলাম এবং আগামীতেও থাকবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সকল সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে করেছি। এখানে সব কিছুই পরিষ্কার। কেউ ব্যক্তিগত অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করলে আমরা তাদের বাধা দিতে পারি না। সমন্বয়ক কমিটিতে অনেকেই নিরাপত্তার জন্য আসতে চায়নি বলে কমিটি দিয়েও আমরা তা বিলুপ্ত করতে বাধ্য হই। যারা সাহস দেখিয়ে এগিয়ে এসেছে তাদের নিয়ে বর্তমান সমন্বয়ক কমিটি। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক হওয়ার কথা না।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই ২২ জন সদস্য করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করে পরবর্তীতে নিরাপত্তাজনিত কারণে কমিটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ। এরপর ৫ আগস্ট মোট ৩০ জনকে সদস্য করে পুনরায় সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।