অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের (কেবিনেট) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের এ বৈঠক শুরু হয়। তার আগে সকাল ১০টা থেকে উপদেষ্টাদের যমুনায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। বৈঠকটি দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে।
বৈঠকে তিনটি খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে।
শেখ মুজিব পরিবারের নিরাপত্তা আইন বাতিলের খসড়া অনুমোদন
শেখ পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেবল একটি পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য আইনটি করা হয়েছিল, যা একটি সুস্পষ্ট বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সকল বৈষম্য দূরীকরণে দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছে। ‘বর্তমানে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায়’ রহিয়াছে বিধায় এ বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই আইনটি রহিতকল্পে অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে, উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠক কর্তৃক ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়। এর আগে, ২০০৯ সালে “জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। পরে ২০১৫ সালে ওই আইন অনুসারে বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধাদি প্রদানের গেজেট জারি করা হয়।
গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করলো বাংলাদেশ
গুম থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বৃহস্পতিবার সই করেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় জাতিসংঘের ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রতি বছর ৩০ আগস্ট জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর দিবসটির একদিন আগে বাংলাদেশ এতে সই করলো। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মুহূর্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যায়িত করেন। এর আগে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে গুম হওয়া প্রতিটি ঘটনা তদন্তে এই সপ্তাহের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি কমিশন গঠন করে।
বিবিএনজে এগ্রিমেন্টের অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন
২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত বিবিএনজে এগ্রিমেন্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে, গভীর সমুদ্রে পরিবেশগত ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ, জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, অন্যান্য মেরিন জেনেটিক রিসোর্সের নিয়ন্ত্রণ, জেনেটিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণকে স্বীকৃতি প্রদান, রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, ঝুঁকিপূর্ণ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বা ভালনারেবল মেরিন ইকোসিস্টেম (ভিএমইএস) শনাক্তকরণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সমুদ্রের দূষণ প্রতিরোধ, হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। গভীর সমুদ্রের সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বিনির্মাণ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তাকে বিবিএনজে এগ্রিমেন্টে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বিবিএনজে এগ্রিমেন্ট’-এ এমজিআর সংক্রান্ত বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি, মেরিন প্রযুক্তি হস্তান্তর, ‘principle of common heritage of mankind’ অনুযায়ী MGR-এর অর্থনৈতিক ও অ-আর্থিক ক্ষেত্রে অধিকতর সুবিধা অর্জনের বিষয়সমূহকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বিধায় বাংলাদেশ কর্তৃক বিবিএনজে এগ্রিমেন্টের অনুসমর্থন করা হলে বাংলাদেশের পক্ষে এতদ্সংক্রান্ত বিষয়ে ন্যায্য হিস্যা অর্জন করা সম্ভব হবে। এ প্রেক্ষাপটে, ‘Agreement under the United Nations Convention on the Law of the Sea on the Conservation and Sustainable Use of Marine Biological Diversity of Areas Beyond National Jurisdiction (BBNJ Agreement)’ অনুসমর্থনের প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে অনুমোদন করা হয়।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর পরিবারের সদস্যগণ’ এবং কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্র-প্রধান বা সরকার প্রধান এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে ঘোষিত ব্যক্তিগণের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গত ০৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাগণের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এইরূপ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১’-এর আওতায় প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া, বিদ্যমান আইনের আওতায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর পরিবারের সদস্যগণের’ নিরাপত্তা প্রদান সংক্রান্ত বিধানসমূহ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকর করা সম্ভব নয় বিধায় বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় উক্ত আইনের কতিপয় বিধান বিলোপসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি সংযোজনপূর্বক ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’ উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।
সূত্র: জুমবাংলা