জাতীয়: ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ এবং এতে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহীদদের রক্তের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কার প্রেসক্রিপশনে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নও তুলেছেন নেতারা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌথ আয়োজনে বিক্ষোভটি অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ শেষে একটি মিছিল ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ থেকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা পদ থেকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানানো হয়। বিক্ষোভকারীরা বলেন, জুলাই-আগস্টে ফেসবুকে ২/১টা পোস্ট দিয়েই উপদেষ্টা হয়ে যাচ্ছেন। ভারতের দালালি করা ব্যক্তিরাও ডাক পাচ্ছেন বঙ্গভবনে, যেটি অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বেঈমানি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে কীভাবে নিয়োগ দেয়া হলো- তা স্পষ্ট করার আহ্বানও জানান তারা। বিক্ষোভে উত্তরবঙ্গের কোনো জেলার কেউ উপদেষ্টা নিয়োগ না পাওয়ারও সমালোচনা করা হয়।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ৫ই জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের সবচেয়ে বড় আইরনি হলো তিন মাস পরেও হাসিনার বিচার চাইতে হয়। শিক্ষার্থীরা মুজিববাদ এবং আওয়ামী দোসরদের তাড়াতে ব্যস্ত। অন্যদিকে তখন আমরা খবর পাই ধানমণ্ডি-৩২কে যারা কা’বা মনে করে তাদেরকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আপনারা যদি মনে করেন ছাত্র-জনতার রক্তকে পুঁজি করে উপদেষ্টা হবেন, তাহলে ভুল বুঝছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই কাদের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী দোসরদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ছাত্র-জনতার রক্তকে উপেক্ষা করে মশকরা করছেন। চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুনর্বাসন চাই না। যাদেরকে নিয়োগ দিচ্ছেন গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবদান কী? তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস জানতে চাই। আর যদি সমঝোতা করে থাকেন, তাহলে মনে রাখবেন আমাদের জীবনে আর হারানোর কিছুই নেই। আমরা খুনি হাসিনাকে উৎখাত করেছি, তার লিগ্যাসি রক্ষা করার জন্য না। তিনি বলেন, দু’জন ছাত্র উপদেষ্টার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আমাদের প্রতিবাদের মুখে বঙ্গভবন থেকে মুজিবের ছবি সরানো হয়েছে। শুধু ছবি নয়, আমরা ফ্যাসিবাদের সকল সিম্বলের রিমুভাল চাই।
উপদেষ্টা পরিষদকে উদ্দেশ্য করে সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, কথা ছিল আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ হবে এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে। কথা ছিল গণঅভ্যুত্থানের অংশীদাররা সরকার চালাবে। আপনারা মাঠে বলছেন ছাত্র-জনতার সরকার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আনা হচ্ছে। বিপ্লব রক্ষার জন্য যা দরকার সবই করবো। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আকাঙ্ক্ষা আমরা বাস্তবায়ন করবোই।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উদ্দেশ্যে সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, সংস্কৃতি বলতে আপনি কী বোঝেন? পশ্চিম থেকে ধার করে আনা জিনিস না কি বাংলাদেশের প্রতিদিনের জীবনচর্চা। প্রাত্যহিক জীবনচর্চা ও মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ কারও মধ্যে না থাকে তাহলে সে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ধারণ করে না। যারা ধানমণ্ডি-৩২কে কা’বা মনে করে তাদেরকে আমরা লালকার্ড দেখাই। এমন কাউকে আমরা উপদেষ্টা প্যানেলে চাই না। এই সরকারে যারা ফ্যাসিবাদের দোসর আছে তাদেরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আঞ্চলিকতার অভিযোগ করে তিনি বলেন, উপদেষ্টা নিয়োগে আঞ্চলিকতাকে ইস্যু করা হচ্ছে। শুধুমাত্র একটা অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগে প্রাধান্য পাচ্ছে। আন্দোলনের সময় উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রয়োজন হয়, কিন্তু উত্তরবঙ্গ থেকে কোনো উপদেষ্টা নাই। দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রথম শহীদ আবু সাঈদ উত্তরবঙ্গের সন্তান। উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করা হলে আমরা লালকার্ড দেখাতে বাধ্য হবো।
সূত্র : মানবজমিন