প্রচ্ছদ জাতীয় আরো বাড়ল খোলা সয়াবিন তেলের দাম, বোতলজাত যে দামে

আরো বাড়ল খোলা সয়াবিন তেলের দাম, বোতলজাত যে দামে

বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নতুন করে আরো বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। দাম বেড়ে এখন খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় এবং প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা তেলের দাম বাড়লেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়েনি, আগের দর ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী কাঁচাবাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, বাড়তি দামে বিক্রির আশায় বিক্রেতারা বোতলজাত সয়াবিন তেলের মুখ খুলে ড্রামে ঢেলে বিক্রি করছেন। এতে বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, ‘বাজারে খোলা তেলের দাম বাড়ার কারণে বোতলজাত তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কম্পানিগুলো।

সব ধরনের পণ্যের উচ্চমূল্যের মধ্যে নতুন করে ভোজ্য তেলের দামে অস্থিরতায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ক্রেতারা বলছে, প্রতিবারের মতো এবারও রমজান মাস সামনে রেখে পুরনো সিন্ডিকেট আগে থেকে তেলের বাজার অস্থির করে তুলছে। তাই জোরালো তদারকির মাধ্যমে এখনই এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

তা না হলে রমজানে ভোজ্য তেলের বাজার আরো অস্থির হয়ে উঠতে পারে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, সাধারণত বাজারগুলোতে খোলা তেল লিটার ও কেজি—এই দুইভাবেই বিক্রি করা হয়। লিটারের চেয়ে কেজিপ্রতি দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত পার্থক্য হয়ে থাকে। এক মাস আগেও তাঁরা খুচরায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। দাম বাড়ার কারণে এখন ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্যে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। খোলা পাম তেলের দাম লিটারে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন তেল কম্পানির ডিলাররা বলছেন, ‘কম্পানিগুলো আমাদের তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। একজন ডিলারের ১০০ কার্টনের চাহিদা থাকলে কম্পানিগুলো দিচ্ছে ২০ থেকে ৩০ কার্টন। এতে বিক্রেতারাও তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছেন না। বাজারে বোতলজাত তেলের কিছুটা সংকট চলছে। এই সংকট সাময়িক। আশা করছি, শিগগিরই কম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ বাড়াবে।’

তেজগাঁওয়ের কলমিলতা বাজারের মুদি দোকানি শরিফুল হক বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে কম্পানিগুলো বাজারে বোতলজাত তেল দিচ্ছে না। গত ৭ নভেম্বর আমার কাছ থেকে বোতলজাত তেল দেবে বলে টাকা নিয়ে গত বুধবার টাকা ফেরত দিয়েছে।’

জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের বিক্রেতা মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে এখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। খোলা তেলের দাম বাড়ার পর থেকে কম্পানিগুলো বোতলজাত তেল নিয়ে টালবাহানা করছে।’

ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় রাখতে গত ১৭ অক্টোবর সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা কার্যকর থাকবে। শুল্ক-কর সুবিধার পরও বাজারে তেলের দাম বেড়েছে।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘রোজা ঘিরে কয়েক বছর ধরে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট একটি পন্থা অবলম্বন করছে। রোজায় দাম না বাড়িয়ে রোজা শুরুর তিন-চার মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে রাখছে। এতে রোজায় ক্রেতারা বাড়তি দরেই পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।’

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভারত থেকে ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গতকাল খুচরায় বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সুপারশপ স্বপ্নের আউটলেটগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দাম না বাড়লেও চড়া মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে রসুন। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। দেশি রসুন প্রতি কেজি মানভেদে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা এবং আমদানি করা রসুনের কেজি ২৪০ টাকা।

খুচরায় প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আগের বাড়তি দরেই বিক্রি করা হচ্ছে মুরগি। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে ১৯০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি মানভেদে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।

বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও বেশ কিছু শীতের সবজির দাম এখনো চড়া। প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা। লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ থেকে ১০০ টাকা। নতুন আলু প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পুরনো আলু ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, লতা ৮০ টাকা। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

সূত্র : কালের কণ্ঠ