রাজনীতি: শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তবে ছাত্রদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। এ আন্দোলন ঘিরে কারাভোগ ও রিমান্ডেও যেতে হয়েছে তাকে। পরে শেখ হাসিনার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট জামিন পান ব্যারিস্টার পার্থ। এদিকে ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দলগুলো রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও বিএনপি সমর্থিত দলগুলো সক্রিয় রয়েছে। দেশের রাজনীতিতে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মানিক রাইহান বাপ্পী।
যুগান্তর: অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন হওয়া উচিত?
ব্যারিস্টার পার্থ: তারা তো শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের কাজ হাতে নেয়নি। তারা যেহেতু রাষ্ট্র মেরামতের পরিকল্পনা করছেন, কতটুকু ও কিভাবে সংস্কার করবেন- এখন পর্যন্ত তারা তো কোনো গাইডলাইন দেননি। বিশেষ করে রাষ্ট্র মেরামতের কী কী গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দেবেন ও কত সময় উনাদের দরকার তখন বলা যাবে কতদিন মেয়াদ হওয়া উচিত। বিশেষ করে ১৭ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এটা মানুষের তীব্র আকাঙ্ক্ষা আছে। আমাদেরও আকাঙ্ক্ষা আছে। মূল কথা হচ্ছে, এই সরকারের সময়টা নির্ধারণ করবে তারা কী ধরনের রাষ্ট্র মেরামত করতে চান।
যুগান্তর: মন্ত্রীদের পাশাপাশি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান গ্রেফতার হয়েছেন; যার দুর্নীতি নিয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন, তাকে দরবেশ খেতাব দিয়েছিলেন। দেশের মাটিতে তার বিচার সম্ভব কিনা?
ব্যারিস্টার পার্থ: অবশ্যই দেশের মাটিতেই সালমান এফ রহমানের বিচার হবে। দরবেশের বিচার বাংলার মাটিতেই হতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি তিনিই ধ্বংস করেছেন। ইকোনমিক সিস্টেমও ধ্বংস করেছেন। দেশে যে গণহত্যা হয়েছে তার সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত।
যুগান্তর: স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব কাজ করছে সেটাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ব্যারিস্টার পার্থ: সরকার কিছু কাজ শুরু করেছে। দুর্নীতি নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে যেসব কাজ শুরু করেছে সেগুলো অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমি মনে করি, আরও পথ বাকি আছে।
যুগান্তর: নিকটবর্তী সময়ে বিএনপির সঙ্গে জোটে যাবেন কিনা?
ব্যারিস্টার পার্থ: এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। এগুলো বিষয় সামনে দেখা যাবে। নির্বাচন কোন দিকে যাচ্ছে, দেশের পরিস্থিতি কী হচ্ছে। সময় এলে বোঝা যাবে।
যুগান্তর: বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান?
ব্যারিস্টার পার্থ: আগামীর প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা জনগণ ঠিক করবেন। আমার ধারণা, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারেক রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আমি মনে করি, জনগণের যেটা ইচ্ছা সেটাই আমাদের ইচ্ছা হবে। আমরা চাই একটা সুষ্ঠুধারার রাজনীতি থাকুক।
যুগান্তর: আওয়ামী লীগের ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
ব্যারিস্টার পার্থ: এটা নির্ভর করবে তাদের কর্মপন্থা ও ভবিষ্যত দিনগুলোতে তাদের ভূমিকার ওপর। বর্তমান আওয়ামী লীগের যে পরিস্থিতি তাতে তারা ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। আবার ভালো নেতৃত্ব নিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতেও পারে। তবে যে হত্যা ও গণহত্যার দায়ভার আওয়ামী লীগের ওপর পড়বে তাদের মানুষের মনের ভেতরে জায়গা করে নিতে আরও বহু বছর সময় লাগবে।
আমি নীতিগতভাবে মনে করি, এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার নেই।
যুগান্তর: সদ্যবিদায়ী আওয়ামী সরকার পতনের কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে। এটাকে কিভাবে দেখেন?
ব্যারিস্টার পার্থ: আওয়ামী লীগ সরকার মনে করেছিল, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে তারা কর্মসূচি দেবে। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে জামায়াতি আন্দোলন হিসেবে ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করবে; কিন্তু তাতে তারা সফল হয়নি।
যুগান্তর: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ব্যারিস্টার পার্থ: আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ।
সূত্র: যুগান্তর